HSC এর পর বিদেশে পড়াশোনা (বিদেশ পড়ার খরচ ও সুবিদা, অসুবিদা)

এইচএসসি পরীক্ষার পর অনেক শিক্ষার্থীরই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছে থাকে। তবে সঠিক তথ্যের অভাবে এবং সুপরিকল্পিত গাইডলাইনের অভাবে অনেক সময় সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।

আজকের পোস্টে আমরা বিদেশে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এবং নির্দেশিকা তুলে ধরবো যা আপনাদের এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়ক হবে।

HSC এর পর বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া

এইচএসসি পরীক্ষার পর বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া বেশ কিছু ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপেই আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার সকল একাডেমিক ডকুমেন্টস সঠিক এবং সম্পূর্ণ আছে। যদি কোনো ডকুমেন্টস না থাকে বা অসম্পূর্ণ থাকে তবে সেগুলো দ্রুত সংগ্রহ বা প্রস্তুত করতে হবে। 

এছাড়া আপনার সিভি এবং কাভার লেটার আপডেট করতে হবে এবং সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়ে নিতে হবে। আবেদনের জন্য সাধারণত যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় সেগুলো হল:

  • পাসপোর্ট: বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট অত্যাবশ্যক। এটি আপডেট করা আছে কিনা এবং বৈধতা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট: আপনার জন্মের তারিখ ঠিক আছে কি না তার প্রমাণ হিসেবে এই সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে): যদি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে তবে সেটিও আবেদন প্রক্রিয়ায় দরকার হতে পারে।
  • এসএসসি সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট এবং টেস্টিমোনিয়াল: এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল এবং সার্টিফিকেট অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া স্কুল কর্তৃক প্রদত্ত টেস্টিমোনিয়ালও সংগ্রহ করতে হবে।
  • এইচএসসি ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট এবং টেস্টিমোনিয়াল: এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল এবং সার্টিফিকেট আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত টেস্টিমোনিয়ালও রাখতে হবে।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি: আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন হতে পারে।
  • স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP): SOP আপনার আবেদন পত্রের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে আপনার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কেন আপনি সেই বিশেষ কোর্স বা বিশ্ববিদ্যালয়টি বেছে নিয়েছেন তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে।
  • লেটার অব মোটিভেশন: এই চিঠিতে আপনার পড়াশোনার উদ্দেশ্য, আগ্রহ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে লেখা থাকে। এটি অনেক ক্ষেত্রে SOP-এর মতই তবে কিছুটা সংক্ষিপ্ত আকারে হয়।
  • লেটার অব রিকমেন্ডেশন: আপনার শিক্ষকদের বা কোন প্রতিষ্ঠান প্রধানের দ্বারা লিখিত সুপারিশ পত্রও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজন হতে পারে।
  • IELTS / TOEFL বা অন্যান্য ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট: বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ প্রয়োজন। এজন্য IELTS বা TOEFL পরীক্ষার সার্টিফিকেট জমা দিতে হতে পারে।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে তাই আপনাকে সাবধানতার সাথে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হবে। আবেদন করার সময় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী সব ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে আবেদন করতে হবে।

সব ডকুমেন্টের ফটোকপি সত্যায়িত করে নিতে হবে। বাংলাদেশে এই সত্যায়নের কাজ বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট শাখা বা নোটারি পাবলিক থেকে করানো যায়। কিছু ক্ষেত্রে ডকুমেন্টের হার্ডকপি বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরিয়ার করে পাঠাতে হতে পারে।

এই সকল কাজ সম্পন্ন করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন এবং সময়মত ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন। আবেদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং ধৈর্য্য ধরে করতে হবে কিন্তু সঠিকভাবে করলে এটি একটি সফল উচ্চশিক্ষার দিকে আপনার প্রথম পদক্ষেপ।

আরও দেখুন: কোরিয়া লটারি আবেদন করার নিয়ম ২০২৫

বিদেশে পড়াশোনার খরচ কেমন?

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের খরচ নিয়ে চিন্তা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চান এবং সেই যোগ্যতাও রাখেন তবে খরচের কারণে অনেকের সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।

বিদেশে পড়াশোনা করার খরচ নির্ভর করে বিভিন্ন ফ্যাক্টের উপর। যেমন কোন দেশে পড়তে যাচ্ছেন, কোন শহরে থাকবেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন এবং কোন বিষয়ের উপর পড়াশোনা করবেন। এ কারণে খরচের পরিমাণ একেক দেশের জন্য একেক রকম হয়ে থাকে।

তবে আনুমানিক কিছু খরচের ধারণা দেওয়া যেতে পারে যা আপনাকে একটি সাধারণ ধারণা দিতে সাহায্য করবে। নিচে কিছু প্রধান দেশের বাৎসরিক পড়াশোনা থাকা-খাওয়া এবং অন্যান্য খরচের সম্ভাব্য পরিমাণ উল্লেখ করা হলো:

  • যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বছরে আনুমানিক খরচ পড়তে পারে ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকার মধ্যে। এই খরচের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, থাকা-খাওয়ার খরচ এবং অন্যান্য ব্যয় অন্তর্ভুক্ত।
  • যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে হলে বছরে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার প্রয়োজন হতে পারে। এখানে খরচ নির্ভর করবে আপনি লন্ডন বা অন্য কোনো শহরে থাকছেন কিনা তার উপর।
  • জার্মানি: জার্মানিতে তুলনামূলকভাবে খরচ কম তবে এটি অবশ্যই কোর্স ও শহরের উপর নির্ভর করে। আনুমানিক বছরে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।
  • কানাডা: কানাডায় পড়াশোনার খরচের পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মধ্যে হতে পারে। এখানেও খরচ শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভরশীল।
  • জাপান: জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য আনুমানিক ১২ থেকে ১৭ লাখ টাকার প্রয়োজন হতে পারে। 

উল্লেখ্য উপরের খরচগুলো আনুমানিক এবং প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃত খরচ ভিন্ন হতে পারে। খরচের মধ্যে টিউশন ফি ছাড়াও থাকা-খাওয়া, পরিবহন, স্বাস্থ্যবিমা এবং অন্যান্য ব্যয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাই বিদেশে পড়াশোনা করার পরিকল্পনা করার আগে সুনির্দিষ্ট খরচের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন।

এইচএসসি এর পর বিদেশে পড়াশোনা করবেন কেন?

এইচএসসি পাস করার পর বিদেশে পড়াশোনা করার অনেক সুবিধা রয়েছে যা অনেক শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করে। উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে শিক্ষার মান, অবকাঠামো এবং শিক্ষা পরিবেশ অত্যন্ত উচ্চমানের।

ফলে সেখান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। বিদেশে পড়াশোনা করার অন্যতম কারণ হলো এইচএসসি পাস করার পর বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে শিক্ষাবৃত্তি লাভের সম্ভাবনাও থাকে।

 আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য অনেক দেশই বিপুল সংখ্যক শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুযোগ। অনেক দেশে মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামের তুলনায় ব্যাচেলর প্রোগ্রামে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হয়।

এর ফলে যদি কোনো শিক্ষার্থী ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ পায় তবে ভবিষ্যতে সেই দেশেই মাস্টার্স বা উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করা সহজ হয়। এই কারণগুলো বিদেশে পড়াশোনাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে এবং অনেক শিক্ষার্থী এই সুযোগটি গ্রহণ করতে চায়।

তাছাড়া বিদেশে পড়াশোনা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক মানের জ্ঞান অর্জন করতে পারে যা তাদের পেশাগত জীবনে অনেক বড় সুবিধা এনে দিতে পারে।

HSC এর পর বিদেশে পড়াশোনা করার গাইডলাইন

অনেক শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক (HSC) পরীক্ষার পর বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সঠিক তথ্য, পরামর্শ এবং গাইডলাইনের অভাবে অনেকেই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। বিদেশে পড়াশোনা করতে চাইলে ধাপে ধাপে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

এই অংশে আমরা আলোচনা করবো HSC পরীক্ষার পর কিভাবে ধাপে ধাপে প্রস্তুতি নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ কাজে লাগানো যায়। প্রতিটি ধাপই এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিকভাবে অনুসরণ করলে শিক্ষার্থীরা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।

hsc pore ki

১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

যেকোনো কাজ শুরু করার আগে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদেরকে কাজের দিকনির্দেশনা দেয় এবং সফলতার পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।

বিশেষ করে বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তার ভিত্তিতে পরিকল্পনা করা অপরিহার্য। প্রথমেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি এইচএসসি পরীক্ষার পর কোন সেমিস্টারে ভর্তি হবেন এবং কতটুকু সময় আপনি প্রস্তুতির জন্য নিবেন।

বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সেমিস্টার থাকে যেমন সামার সেমিস্টার, স্প্রিং সেমিস্টার, অটাম সেমিস্টার ইত্যাদি। প্রতিটি সেমিস্টারের সময় এবং সুযোগ সুবিধা আলাদা তাই আপনার প্রয়োজন ও পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে সঠিক সেমিস্টার নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। 

পরিকল্পনার একটি মূল বিষয় হলো আপনি কেন দেশের বাইরে পড়তে যেতে চান এবং দেশের মধ্যে কেন নয় তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারা। এর মাধ্যমে আপনার লক্ষ্য পরিষ্কার হবে এবং আপনার সিদ্ধান্ত দৃঢ় করবে।

এইচএসসি পরীক্ষার অন্তত ছয় মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা করা উচিত যাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আপনি প্রস্তুতি নিতে পারেন। বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া শিক্ষার্থী এবং তার পরিবারের জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত। তাই ভেবেচিন্তে সময় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ সময়ে আপনি যে পরিকল্পনা তৈরি করবেন তাতে আপনার পড়াশোনার লক্ষ্য, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, আর্থিক সাপোর্ট এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।  সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে গেলে বিদেশে পড়াশোনা করার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।

২. একাডেমিক ফলাফল ভালো করুন

বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণ করতে হলে শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না এর সঙ্গে একাডেমিক ফলাফলের প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে হবে।

একটি ভালো একাডেমিক রেকর্ড আপনার জন্য বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ এবং কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে অধ্যয়নের পথ খুলে দেবে।

সেই সঙ্গে স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই একাডেমিক পড়াশোনা কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। 

আপনার প্রতিটি পরীক্ষার ফলাফলই ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নিয়মিত পড়াশোনা শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সময় বিনিয়োগ করতে হবে।

পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহায়ক বইপত্র ও অনলাইন রিসোর্স থেকে অতিরিক্ত জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা বাড়াতে হবে। অন্যদিকে শুধু পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলেই হবে না বরং এর পাশাপাশি নিজের সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতাও উন্নত করতে হবে।

পরিকল্পিত ও সময়োপযোগী অধ্যয়ন অভ্যাস গড়ে তুললে আপনি কেবল ভালো ফলাফলই অর্জন করবেন না বরং একাডেমিক সফলতায়ও এগিয়ে থাকবেন।

৩. IELTS এর প্রস্তুতি নিন

যারা উচ্চশিক্ষা বা বিদেশে কাজ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা শিখে নেয়া আপনাকে বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে সফল হতে সহায়তা করবে।

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং গ্রহণযোগ্য। তাই আপনি যেই দেশেই যাওয়ার পরিকল্পনা করুন না কেন ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন।

ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণের জন্য সবচেয়ে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য পরীক্ষা হলো International English Language Testing System যা সংক্ষেপে IELTS নামে পরিচিত। এই পরীক্ষা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন দক্ষতার (শোনা, পড়া, লেখা ও কথা বলা) মূল্যায়ন করে।

যদি আপনি ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য বিদেশে যেতে চান তবে আপনাকে ন্যূনতম ৬.০ আইইএলটিএস ব্যান্ড স্কোর পেতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে উচ্চতর শিক্ষার জন্য অধিক স্কোর প্রয়োজন হতে পারে।

এসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত ৬.৫ থেকে ৭.০ ব্যান্ড স্কোর প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশের বড় শহরগুলো যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনায় বিভিন্ন কোচিং সেন্টার রয়েছে যেখানে IELTS প্রস্তুতির জন্য কোর্স করানো হয়।

আপনি যদি এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চান তবে এসব কোচিং সেন্টারে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এসব কোচিং সেন্টার ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে।

আপনি যদি বড় শহরে অবস্থান না করেন বা কোচিং সেন্টারে যোগ দিতে না পারেন তবে ঘরে বসেই অনলাইনে আইইএলটিএস প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব। বর্তমানে অনেক কোচিং সেন্টার ও এড টেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস প্রদান করে থাকে।

এছাড়াও ইউটিউবে আইইএলটিএস সম্পর্কিত অনেক ফ্রি ভিডিও পাওয়া যায় যা দেখে আপনি প্রস্তুতি নিতে পারেন।

সুতরাং আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হলে এখনই পরিকল্পনা শুরু করুন এবং ইংরেজি ভাষায় আপনার দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। এই প্রস্তুতি আপনাকে বৈশ্বিক দুনিয়ায় এক ধাপ এগিয়ে রাখবে।

৪.  তৃতীয় ভাষা শিখুন

যেসব দেশে ইংরেজি প্রচলিত নয় যেমন জার্মানি, চীন, এবং জাপান সেসব দেশে পড়াশোনা বা কাজ করতে চাইলে স্থানীয় ভাষা শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশগুলোর মানুষ প্রধানত তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলে তাই সেখানে ইংরেজি জানা যথেষ্ট নয়।

যদি আপনি HSC শেষ করার পর বিদেশে পড়াশোনার জন্য এমন কোনো দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন যেখানকার স্থানীয় ভাষা ইংরেজি নয় তাহলে ইংরেজির পাশাপাশি সে দেশের ভাষাটাও শেখা প্রয়োজন।

উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি চীনে পড়তে যান তাহলে আপনাকে চীনা ভাষা শিখতে হবে। একইভাবে জার্মানিতে গেলে জার্মান ভাষা এবং জাপানে গেলে জাপানি ভাষা শিখতে হবে।

স্থানীয় ভাষা জানার অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রথমত এটি আপনাকে সেই দেশে বিভিন্ন কাজের সুযোগ এনে দিতে পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি পার্ট-টাইম কাজ করে নিজের খরচ চালাতে পারবেন।

এমনকি স্থানীয় ভাষা জানা থাকলে আপনি কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন যদিও শুধুমাত্র ইংরেজি জানলেও কিছু কাজ পাওয়া সম্ভব।

তাছাড়া স্থানীয় ভাষা শেখা আপনাকে সেই দেশের মানুষদের সাথে সহজেই যোগাযোগ করতে সাহায্য করবে। আপনি তাদের সংস্কৃতির সাথে ভালোভাবে মিশে যেতে পারবেন এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত হতে পারবেন।

এতে করে আপনার বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ এবং উপভোগ্য হয়ে উঠবে।

৫. সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় খুজুন

বিদেশে পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলে অন্তত ছয় মাস আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। এজন্য অনলাইনে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। 

প্রথমে আপনার পরিবারের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করুন। মনে রাখবেন প্রতিটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে খরচ ও সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন হতে পারে।

তাই কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী কোর্স অফার করা হয় তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি। পাশাপাশি পছন্দের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থাকলে সেখানে পড়াশোনার খরচ, আবাসন, স্কলারশিপের সুযোগ এবং অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।

StudyPortal ওয়েবসাইটটি ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য কোর্স খুঁজতে সহায়ক হতে পারে। এখানে আপনি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স ও তার ব্যয় সম্পর্কে ধারণা পাবেন। 

কোর্স নির্বাচন করার সময় নিজের পছন্দ ও আগ্রহকে অগ্রাধিকার দিন। সেইসঙ্গে বৈশ্বিকভাবে কোন ধরণের কোর্সের চাহিদা বেশি সেটাও বিবেচনায় নিন। 

বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি যে শহরে থাকতে চান সেখানকার জীবনযাত্রার খরচ এবং কাজের সুযোগ। একই দেশের বিভিন্ন শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় আলাদা হতে পারে তাই এটি মাথায় রেখে আপনার পছন্দের শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করুন। 

পরিকল্পনা এবং গবেষণার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব যা আপনার শিক্ষাজীবনকে আরও সুন্দর এবং সফল করতে সহায়ক হবে।

HSC এর পর বিদেশে পড়াশোনার সুবিধা ও অসুবিধা

HSC পরীক্ষার পর বিদেশে পড়াশোনা করার বিষয়টি বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীর কাছে একটি সপ্ন। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সুবিধা ও অসুবিধাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গুরুত্বপূর্ণ। 

বিদেশে পড়াশোনার সুবিধা

১. বিশ্বমানের শিক্ষা

বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করে। উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গবেষণার সুযোগ, আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা উন্নত মানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। 

২. আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা

বিদেশে পড়াশোনা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ভাষা ও জীবনধারা সম্পর্কে জানতে পারে। এটি তাদের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করতে সহায়তা করে যা ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে মূল্যবান হতে পারে। 

৩. উন্নত ক্যারিয়ার সুযোগ

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার ফলে শিক্ষার্থীরা সেই দেশের চাকরির বাজারে প্রবেশের সুযোগ পায়। অনেক দেশেই পড়াশোনা শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয় যা ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে সেখানে থাকার জন্যও সহায়ক হতে পারে।

৪. ব্যক্তিগত উন্নয়ন

বিদেশে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে বাস করতে শেখে যা তাদের ব্যক্তিগত দক্ষতা যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সময় ব্যবস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

৫. বিভিন্ন ধরনের কোর্স ও শিক্ষা পদ্ধতি

বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন ধরনের কোর্স ও শিক্ষা পদ্ধতি রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের তাদের আগ্রহের বিষয় অনুযায়ী পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়। এছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার্নশিপ বা প্র্যাক্টিক্যাল অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগও থাকে। 

বিদেশে পড়াশোনার অসুবিধা

১. উচ্চ ব্যয়

বিদেশে পড়াশোনার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো ব্যয়। টিউশন ফি, বাসস্থান, খাবার এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে খরচ অনেক বেশি হতে পারে। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বড় একটি আর্থিক চাপ হয়ে দাঁড়ায়।

২. ভিসা ও আনুষ্ঠানিকতা

বিদেশে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের ভিসা, অনুমতি এবং বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। এসব প্রক্রিয়া অনেক সময় জটিল ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

৩. ভাষাগত সমস্যা

যদি সেই দেশের ভাষা শিক্ষার্থীর মাতৃভাষা না হয় তবে ভাষাগত বাধা হতে পারে। এটি পড়াশোনা ও দৈনন্দিন জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

৪. কালচারাল শক

বিদেশের সংস্কৃতি ও সামাজিক নিয়মকানুনের সাথে মানিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের সময় লাগতে পারে। অনেক সময় এ ধরণের কালচারাল শক তাদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

৫. একাকীত্ব ও পরিবার থেকে দূরে থাকা

বিদেশে পড়াশোনা করার কারণে শিক্ষার্থীরা পরিবার ও বন্ধুদের থেকে দূরে থাকতে হয় যা অনেক সময় একাকীত্ব ও হতাশার কারণ হতে পারে।

৬. কর্মসংস্থান অনিশ্চয়তা

সব দেশে কাজ করার সুযোগ সমানভাবে পাওয়া যায় না। কিছু দেশে পড়াশোনা শেষে চাকরি পাওয়া কঠিন হতে পারে বিশেষ করে যদি সেই দেশের নাগরিকত্ব না থাকে।

শেষকথা।

বিদেশে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা জরুরি। বিদেশে পড়াশোনা অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীর জীবনে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে তবে সঠিকভাবে প্রস্তুতি না নিলে এর অসুবিধাগুলো চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

সুতরাং পরিবারের সাথে আলোচনা, ভালোভাবে গবেষণা এবং উপযুক্ত পরিকল্পনা করে তবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

আমাদের আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। এছাড়া বিদেশে পড়াশোনা নিয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

আরও জানুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Share via
Copy link