বাজার বলতে বোঝায় এমন এক স্থান যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতারা মিলিত হয়ে বিভিন্ন ধরণের দ্রব্যসামগ্রী কেনে এবং বেচে। আবার যেসব বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা কম থাকে এবং দ্রব্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিক্রেতাদের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায় না সেগুলোকে অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে। এই ধরনের বাজারে বিক্রেতারা তাদের পণ্যের উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে যার ফলে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। এই অপূর্ণ বাজারকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয় যথা:
- একচেটিয়া বাজার
- একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার
- দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বাজার
আজকের পোস্টে আমরা একচেটিয়া বাজার কি? একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাকে বলে? দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বাজার কাকে বলে? এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। অতএব দেরী না করে চলুন আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করি।
একচেটিয়া বাজার কি?
একচেটিয়া বাজার হলো এমন একটি বাজার ব্যবস্থা যেখানে একটিমাত্র বিক্রেতা থাকে অপরদিকে অসংখ্য ক্রেতা থাকে। এই বাজারে বিক্রেতার কোন প্রতিযোগী নেই এবং বিক্রি করা পণ্যের কোন বিকল্পও নেই। এর ফলে বিক্রেতা পণ্যের দাম নির্ধারণে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পায়।
এছাড়া যোগান নিয়ন্ত্রণ করে বাজারে তার প্রভাব বিস্তার করে। যেমন একটি দেশের বিদ্যুৎ, রেল, পানি ইত্যাদি পরিষেবা সাধারণত সরকার একচেটিয়া ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এবং দাম নির্ধারণ করে।
একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
একচেটিয়া বাজারের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:
- একচেটিয়া বাজারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার দাম নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রতিষ্ঠানটি বাজারে প্রবেশের জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে বাধা দিতে পারে এবং বাজারে নিজেদের একচেটিয়া অবস্থান বজায় রাখতে পারে। সাধারণত সরকারি প্রতিষ্টান একচেটিয়া ভাবে অবস্থান করে তাই অন্য কোন প্রতিষ্টানকে বাধা দিতে পারে।
- একচেটিয়া বাজারে কোন বিকল্প পণ্য নেই। ক্রেতাদের কাছে বিক্রেতার সরবরাহ করা পণ্য ছাড়া অন্য কোন বিকল্প থাকে না।
- একচেটিয়া প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের পণ্য বা সেবার জন্য দাম নির্ধারণ করতে পারে। তারা চাহিদা, উৎপাদন খরচ এবং মুনাফা সর্বাধিক করার লক্ষ্যে দাম নির্ধারণ করে। একচেটিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়শই উচ্চ দাম নির্ধারণ করে যা প্রতিযোগিতামূলক বাজারের তুলনায় গ্রাহকদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- একচেটিয়া বাজারে অপব্যবহার রোধ করতে এবং জনস্বার্থ রক্ষা করতে সরকার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে পারে। নিয়ন্ত্রণমূলক আইন, মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিযোগিতা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার একচেটিয়া প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
- অনিয়ন্ত্রিত একচেটিয়া বাজার ভোক্তাদের ক্ষতি করতে পারে। উচ্চ দাম, কম মানের পণ্য ইত্যাদির কারণে ভোক্তারা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাকে বলে?
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের ক্ষেত্রে অনেক গুলো বিক্রেতা একই পন্য বিক্রি করে কিন্তু পন্য গুলো তারা বিভিন্ন ভাবে একে অপরের থেকে আলাদা করার চেষ্টা করে। যেমন একটি বাজারে বিভিন্ন ধরনের রেস্তোরাঁ থাকে। তাদের কাজ মুলত খাবার বিক্রি করা।
কিন্তু প্রত্যেকেই নিজেদেরকে আরোও ভালো ভাবে উপস্থাপন করানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন খাবার পরিবেশন করে। এই ধরনের বাজারকে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলা হয়।
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:
- এই বাজারে বিক্রেতার সংখ্যা পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের তুলনায় কম তবে একচেটিয়া বাজারের তুলনায় বেশি থাকে। বিক্রেতারা এত বেশি না হওয়ায় তারা বাজারে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। তবে বিক্রেতার সংখ্যা এত কমও নয় যে একজন বিক্রেতা পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
- এই বাজারে বিক্রেতারা একই ধরণের পণ্য বিক্রি করে তবে পণ্যগুলো পুরোপুরি একই রকম নয়। ব্র্যান্ড, নকশা, গুণমান, প্যাকেজিং, বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে বিক্রেতারা তাদের পণ্যকে একে অপরের থেকে আলাদা করে তোলার চেষ্টা করে। এই পণ্য পার্থক্যের কারণে ক্রেতাদের কাছে পছন্দের বিকল্প তৈরি হয় এবং বিক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
- একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বিক্রেতারা তাদের পণ্যের ব্র্যান্ডিং এবং বিপণনের জন্য বিজ্ঞাপনের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কারণ পণ্যের পার্থক্য করা এবং গ্রাহকদের কাছে পণ্যের প্রচার করার জন্য বিজ্ঞাপন একটি সেরা হাতিয়ার।
- একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বিক্রেতারা পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের তুলনায় দাম নির্ধারণে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। কারণ তাদের পণ্যগুলো পুরোপুরি একই রকম না হওয়ায় গ্রাহকরা বিকল্পের অভাব অনুভব করে।
দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বাজার কাকে বলে?
দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বাজারের ক্ষেত্রে কোন পন্যের বিকল্প না থাকলেও ক্রেতা অথবা বিক্রেতা উভয়ই দাম কমাতে বা বাড়াতে পারে। এক্ষেত্রে পন্যের চাহিদা এবং ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে শক্তির পার্থক্যের কারণে দাম পরিবর্তিত হয়।
যেমন ধরুন একজন কৃষক তরমুজ বিক্রি করে। এখন আপনি তরমুজের বিকল্প খুজৃ পাবেন না কিন্তু এর দাম একজন ক্রেতা অথবা বিক্রেতা চাইলে কমাতে বা বাড়াতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
দ্বিপাক্ষিক বাজারের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে দেওয়া হলো:
- এই বাজারের মূল বৈশিষ্ট্য হলো ক্রেতা ও বিক্রেতার পারস্পরিক নির্ভরতা। ক্রেতার কাছে বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্য ছাড়া বিকল্প নেই এবং বিক্রেতার কাছে ক্রেতাকে ছাড়া পণ্য বিক্রি করার বিকল্প নেই। এই নির্ভরশীলতার কারণে উভয় পক্ষই দর কষাকষি করে এবং বাজারে তাদের শক্তি প্রয়োগ করে।
- একচেটিয়া বাজারের ক্ষেত্রে যেখানে বিক্রেতা দাম নির্ধারণ করে দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বাজারে দাম নির্ধারণ হয় দুই পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই তাদের আলোচনা ক্ষমতা, বিকল্পের অভাব, পণ্যের গুরুত্ব এবং বাজারের তথ্য ব্যবহার করে দর কষাকষি করে।
- বাজার ব্যর্থতার ঝুঁকি মোকাবেলায় এবং সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে। সরকার দাম নিয়ন্ত্রণ, প্রতিযোগিতা আইন প্রণয়ন বা সরাসরি বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
আশাকরি একচেটিয়া বাজার কি? এই বিষয়ে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমরা যতটুকু পেরেছি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়া আপনার কোন প্রশ্ন অথবা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
আরো জানুনঃ
- বাজার কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?
- বাজার দর কাকে বলে?
- বাজার কত প্রকার ও কি কি?
- মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় কী?
- দর্শন কিভাবে ব্যাক্তি জীবনের সাথে সম্পর্কিত?
আমি শারমিন আক্তার, লিখা লিখির মাধ্যমে মানুষ কে সঠিক তথ্য দেওয়া আমার এক ধরনের শখ বলতে পারেন, তাই আমি নিয়মিত ব্লগ আর্টিকেল শেয়ার করতে পছন্দ করি। আশা করি আমার শেয়ার করা আর্টিকেল আপনাদের কাজে আসবে, এটাই আমার স্বার্থকতা। সবাই কে ধন্যবাদ।