১৯৭১ সালের বাঙালীর রক্তঝরা মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মরণে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতীক হিসেবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
এখানে মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের দশটি গণকবর রয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন।নতুন প্রজন্মের কাছে স্মৃতিসৌধ একটি চেতনা স্বরূপ।
বাঙালী জাতি যখনই স্মৃতিসৌধ দেখবে তাদের মধ্য দেশপ্রেম ও দেশের জন্য ত্যাগের মহীমা জাগ্রত হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত জীবনে একবার হলেও জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমন করা।
তাই দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে আজকের আর্টিকেলে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাপ্তাহিক বন্ধের দিন,জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইতিহাস, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বাঙালীর চেতনা, জাতীয় স্মৃতিসৌধের অবস্থান,জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্তব্য ৭ টি কেন, কিভাবে যাবেন,যোগাযোগ, প্রবেশ মূল্য, ইত্যাদি সম্পর্কে জানাবো।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাপ্তাহিক বন্ধের দিন
জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে না। এটি প্রায় সারা বছরই দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। তবে সরকারি ছুটি ও বিশেষ উপলক্ষ্যে অনেক সময় পুরোপরি সময় বন্ধ না রেখে ভিজিটিং আওয়ার্সে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় যন্টা দুয়েক এর জন্য স্মৃতিসৌধে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
স্বাধীনতা দিবস:সাধারণত স্বাধীনতা দিবসের আগে ২ দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধ বন্ধ থাকে।কারন স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নানা প্রকারের সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।আর সেই আয়োজনকে কেন্দ্র করেই ২৩-২৫ মার্চ সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরে সর্বসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়।
বিজয় দিবস:স্বাধীনতা দিবসের মত ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগে ও পড়ে ২-৩ দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধ বন্ধ রাখা হয়।পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জার কাজ করার জন্য।
সুটিং :অনেক সময় জাতীয় স্মৃতিসৌধে সুটিং কাজের জন্য কিছু সময় স্মৃতিসৌধ বন্ধ ঘোষনা করা হয়।
আরও জানুনঃ লালবাগ কেল্লা সাপ্তাহিক বন্ধ
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইতিহাস
জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে গড়ে তোলা হয়েছে।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদেরই বীরত্বের প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধ।১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এটি তৈরির জন্য নকশা আহ্বান করা হয়।
১৯৭৮-এর জুন মাসে প্রাপ্ত ৫৭টি নকশার মধ্যে সৈয়দ মাইনুল হোসেন প্রণীত নকশাটি গৃহীত হলে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মূল স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিজয় দিবসের আগে কাজ সমাপ্ত হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বাঙালীর চেতনা
জাতীয় স্মৃতিসৌধকে বাঙালির চেতনার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, তাদের ত্যাগের প্রতি সম্মান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তাদের সংগ্রামকে স্মরণ করে নির্মান করা হয়েছে।
এখানে সবাই এসে বীর শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন এবং দেশের স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে শহীদের শ্রদ্ধা করেন। স্মৃতিসৌধে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে বিভিন্ন জাতীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্তব্য ৭ টি কেন?
জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাতটি স্তম্ভ রয়েছে।যা বাংলাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সাতটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার প্রতীক বহন করে। এই স্তম্ভগুলি একটি ক্রমবর্ধমান উচ্চতায় নির্মিত, যা বাংলাদেশের মুক্তির জন্য,স্বাধীনতার জন্য ক্রমাগত সংগ্রামের প্রতিফলন। এর মধ্যে প্রথমটি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের প্রতীক এবং শেষ স্তম্ভটি স্বাধীনতার বিজয়ের প্রতীক।নিচে এই ৭ স্তম্ভের সাথে জড়িত বাঙালীর আন্দোলনকে তুলে ধরা হলো:
১৯৫২ | ভাষা আন্দোলন |
১৯৫৪ | যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন |
১৯৫৬ | শাসনতন্ত্র আন্দোলন |
১৯৬২ | শিক্ষা আন্দোলন |
১৯৬৬ | ছয় দফা আন্দোলন |
১৯৬৯ | গনঅভ্যুত্থান |
১৯৭২ | মুক্তিযুদ্ধ |
আরও পোস্ট পড়ুনঃ মিরপুর চিড়িয়াখানা সাপ্তাহিক বন্ধ
জাতীয় স্মৃতিসৌধের অবস্থান
জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের সাভারে অবস্থিত, যা ঢাকা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি মূলত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাওয়ার জন্য বাস, নিজস্ব কার, সিএনজি অটোরিকশা ব্যাবহার করা যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় এসে বাসে করে ঢাকা থেকে সাভার পর্যন্ত পৌছালে সাভারের যেকেন জায়গা থেকে সহজেই স্মৃতিসৌধে পৌঁছানো যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে বিভিন্ন প্রাইভেট ট্যাক্সি,রাইড শেয়ারিং ট্যাক্সিতে করে স্মৃতিসৌধে আসা যায়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ যোগাযোগ
মাধ্যম | তথ্য |
নম্বর | জাতীয় স্মৃতিসৌধের নির্দিষ্ট ফোন নাম্বার পাওয়া যায়নি। তবে দর্শনার্থীরা চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানতে পারে। |
ইমেইল | স্মৃতিসৌধের নিজস্ব কোন ইমেইল নেই। |
ওয়েবসাইট | স্মৃতিসৌধ সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনি Beautiful Bangladesh ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন। |
ফেইসবুক পেইজ | বাংলাদেশ জাতীয় স্মৃতিসৌধের নিজস্ব কোনো ফেসবুক পেইজ নেই।তবে ভ্রমন গাইডের পেইজ বা পর্যটন ওসাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত পেইজগুলোতে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। |
জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রবেশ মূল্য
জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশের জন্য কোনো প্রকার টিকিট নেই।তাই প্রবেশ মূল্য নেই। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত এবং দর্শনার্থীরা ফ্রিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধ দর্শন করতে পারবে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের সময়সূচী
জাতীয় স্মৃতিসৌধ খোলা ও বন্ধের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচি রয়েছে।সেই অনুযায়ী নিয়মিত খোলা ও বন্ধ করা হয়।রাতে এটি সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ থাকে।নিচে সময় সূচি দেওয়া হলো:
বার | সময় |
শনিবার | সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৫ টা |
রবিবার | সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৫ টা |
সোমবার | সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৫ টা |
মঙ্গলবার | সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৫ টা |
বুধবার | সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৫ টা |
বৃহস্পতিবার | সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৫ টা |
শুক্রবার | সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা |
আরও দেখুনঃ মহেরা জমিদার বাড়ি সাপ্তাহিক বন্ধ
জাতীয় স্মৃতিসৌধ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন:জাতীয় স্মৃতিসৌধ কবে বন্ধ থাকে?
উত্তর :বিশেষ কারন ছাড়া সাধারণত জাতীয় স্মৃতিসৌধ বন্ধ থাকেনা।
প্রশ্ন:জাতীয় স্মৃতিসৌধ কত সালে স্থাপিত হয়?
উত্তর:১৯৮২ সালে
প্রশ্ন:বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাতটি স্তম্ভ কেন?
উত্তর:সাতটি স্তম্ভ বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সাতটি পর্যায়ের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত।
প্রশ্ন:জাতীয় স্মৃতিসৌধ কিসের প্রতীক?
উত্তর: ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের প্রতীক।
প্রশ্ন:জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর উচ্চতা কত?
উত্তর:১৫০ ফুট বা ৪৬.৬ মিটার
প্রশ্ন:জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে?
উত্তর :সৈয়দ মাইনুল হোসেন
শেষ কথা
বাংলাদেশ জাতীয় স্মৃতিসৌধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। দর্শনার্থীরা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এখানে আসেন।
পরিবার ও আত্মীয় স্বজনসহ নিয়ে এখানে আসা যায়। এটি শিশুদের জন্য একটি শিক্ষামূলক স্থান। যেখানে গেলে শিশু বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে পারবে। তাই, সময় পেলে একবার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঘুরে আসতে পারেন।
তাই দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে আজকের আর্টিকেলে ছিলো জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাপ্তাহিক বন্ধের দিন নিয়ে এ বিষয়ে আপনাদের কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা সাধ্যমতো সঠিক তথ্য দিয়ে আপনাদের সহায়তা করবো।ধন্যবাদ জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাপ্তাহিক বন্ধের দিন নিয়ে আর্টিকেল টি পড়ার জন্য।
আরও জানুনঃ
- ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল সাপ্তাহিক বন্ধ কবে?
- ড্রিম হলিডে পার্ক সাপ্তাহিক বন্ধের দিন
- যমুনা ফিউচার পার্ক বন্ধের দিন
- বসুন্ধরা শপিং মল বন্ধের দিন
- রমনা পার্ক বন্ধের দিন
- মোতালেব প্লাজা সাপ্তাহিক বন্ধ
- সাভার নিউ মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ
- টঙ্গী বাজার সাপ্তাহিক বন্ধ
- পলওয়েল মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ
- মাল্টিপ্লান সেন্টার সাপ্তাহিক বন্ধ
- পাসপোর্ট অফিস সাপ্তাহিক বন্ধ
- বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক গাজীপুর সাপ্তাহিক বন্ধ
- সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর সাপ্তাহিক বন্ধ
আমি শারমিন আক্তার, লিখা লিখির মাধ্যমে মানুষ কে সঠিক তথ্য দেওয়া আমার এক ধরনের শখ বলতে পারেন, তাই আমি নিয়মিত ব্লগ আর্টিকেল শেয়ার করতে পছন্দ করি। আশা করি আমার শেয়ার করা আর্টিকেল আপনাদের কাজে আসবে, এটাই আমার স্বার্থকতা। সবাই কে ধন্যবাদ।