বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে মহেরা জমিদার বাড়ি। অপরূপ সৌন্দর্য্য ও কারুকার্যে ভরপুর এই মহেরা জমিদার বাড়ি নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।এই বাড়ি সম্পর্কে মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গুগল সার্চ করে বিভিন্ন তথ্য জানতে চায়।বিশেষ করে
মহেরা জমিদার বাড়ির ইতিহাস, মহেড়া জমিদার বাড়িতে কী কী আছে,মহেরা জমিদার বাড়ির অবস্থান,মহেরা জমিদার বাড়ি কিভাবে যাব,মহেরা জমিদার বাড়ি যোগাযোগ নম্বর,মহেরা জমিদার বাড়ি সাপ্তাহিক বন্ধ কবে ইত্যাদি।
তাই ভ্রমনকারীদের সুবিধার্থে আজকের আর্টিকেলে আমরা মহেরা জমিদার বাড়ি নিয়ে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, আশা করি পুরো আর্টিকেলটি পড়লে মনযোগ সহকারে আপনার উপকারে আসবে, চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
মহেরা জমিদার বাড়ি সাপ্তাহিক বন্ধ কবে
মহেরা জমিদার বাড়ি সাপ্তাহিক বন্ধ কবে এই নিয়ে অনেকের মাঝে শংসয় রয়েছে। আসলে মহেরা জমিদার বাড়িতে সাপ্তাহিক কোন বন্ধ নাই।
মহেরা জমিদার বাড়িতে সাপ্তাহিক কোন বন্ধ নাই।
তবে, কিছু বিষয় মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যেমন:
- সময়: মহেরা জমিদার বাড়ি সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
- বিশেষ দিন: কোন কোন জাতীয় ছুটির দিন বন্ধ থাকতে পারে।
- আবহাওয়া: বৈরিআবহাওয়ার কারণে কখনও কখনও বন্ধ থাকতে পারে।
- রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার :অনেক সময় বিভিন্ন স্থানে মেরামতের কাজ হয়।তখন কতৃপক্ষ সাধারণ মানুষদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এছাড়াও শুক্র ও শনিবার দর্শনার্থীর ভিড় বেশি থাকার কারনে থাকা ও খাওয়ার খরচ অনেক বেশি পরিমানে লাগে।যদি কোন কারনে সপ্তাহের কোনদিন বন্ধ থাকে তাহলে তা ফেইসবুক পেইজে জানিয়ে দেয়া হয়।
আরও জানুন: চকবাজার সাপ্তাহিক বন্ধ
মহেরা জমিদার বাড়ির ইতিহাস
মহেরা জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। ১৯ শতকের শেষভাগে নির্মিত এই জমিদার বাড়িটি বুদ্ধি ও কালীচরণ সাহা দুই ভাই মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮৯০ দশকের পূর্বে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে নির্মিত হলেও ইটের তৈরি ভবনটির স্থাপত্যশৈলীতে রোমান, মোঘল ও সিন্ধু-খেকুড়দের ছাপ রয়েছে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১,১৭৪ শতাংশ জমির উপর নির্মিত মহেরা জমিদার বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল।১৯৭২ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুল মান্নান।
১৯৯০ সাল থেকে এই পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়।
মহেরা জমিদার বাড়ির ইতিহাসের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক:
- ১৮৯০ সালের পূর্বে: কলকাতা থেকে আসা দুই ভাই বুদ্ধি ও কালীচরণ সাহা মহেরা গ্রামে লবণ ও ডালের ব্যবসা শুরু করেন।সেখানে প্রচুর টাকা রোজগার করে মহেরা গ্রামে আসেন।
- ১৯ শতকের শেষভাগ: জমিদারি প্রথা শুরু হলে, তারা করোটিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ জমি কিনে জমিদার হন।
- জমিদার রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী: এলাকায় স্কুল, কলেজ, দাতব্য চিকিৎসালয় ও রাস্তাঘাট,মন্দির নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: ১৯৭১ সালের ১৪ মে পাকবাহিনী জমিদার বাড়িতে হামলা করে জমিদার রানী যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ ৫ জনকে হত্যা করে।
- বর্তমানে: মহেরা জমিদার বাড়ি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত।
মহেরা জমিদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী:
- স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে নির্মিত: বলা হয় ভবনগুলোর নির্মাণশৈলী রোমান, মোঘল ও সিন্ধু-খেকুড়দের সাথে মিল রয়েছে।
- চারটি প্রধান ভবন: মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং কালীচরণ লজ।
- বিশাল বাগান: বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী ফুল, গাছপালায় পরিপূর্ণ।
- দুটি দীঘি: বিশাখা সাগর এবং পাসরা পুকুর।
মহেরা জমিদার বাড়ির অবস্থান
মহেরা জমিদার বাড়ির অবস্থান বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে প্রায় আট একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।
ঢাকা ও টাংগাইল মহাসড়কের নাটিয়াপাড়া বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বে মহেড়া জমিদার বাড়ি অবস্থিত।
মহেরা জমিদার বাড়ি যাওয়ার উপায়
মহেরা জমিদার বাড়ি কিভাবে যাব তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই।মূলত মহেরা জমিদার বাড়ি টাংগাইল আসতে হলে প্রথমে ঢাকায় পৌছাতে হবে।
এরপর ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে বিনিময়, নিরালা, ধলেশ্বরী, ঝটিকা ইত্যাদি বাসে আসতে হবে টাঙ্গাইল। জনপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়া পড়বে।
বাসে টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া বাসষ্ট্যান্ডে নামতে হবে। এখানে থাকা সিএনজি ও বেবীটেক্সীতে করে ০৩ কিঃমিঃ পূর্ব দিকে আসলেই চোখে পড়বে মহেড়া জমিদার বাড়ি।
মহেরা জমিদার বাড়ি ফোন নাম্বার ও যোগাযোগ
ঠিকানা | টাঙ্গাইল, নটিয়াপাড়া |
---|---|
নম্বর | ০১৭১১৫৯৪৫৯৮ |
ওয়েবসাইট | https://maheraup.tangail.gov.bd/en |
ফেসবুক পাতা | https://www.facebook.com/MoheraJomidarbari/ |
মহেরা জমিদার বাড়ি যোগাযোগ নম্বর থেকে আপনি চাইলে যেকোন তথ্য জানতে পারেন।
চলুন সংক্ষেপে দেখে নিই মহেরা জমিদার বাড়িতে আসলে যা দেখবেন
- চারটি প্রধান ভবন: মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং কালীচরণ লজ।
- বিশাল বাগান: বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী ফুল, গাছপালায় পরিপূর্ণ।
- দুটি দীঘি: বিশাখা সাগর এবং পাসরা পুকুর।
- জাদুঘর: জমিদারদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, অস্ত্র এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রদর্শন করে।
- মন্দির: হিন্দু দেবদেবীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।
- নাট্যমঞ্চ: জমিদাররা নাটক, অপেরা এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন।
বিশেষ করে, মহেরা জমিদার বাড়িতে প্রায়শই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং উৎসবের আয়োজন করা হত।
মহেরা জমিদার বাড়ি প্রবেশ টিকিট মূল্য
অনেক পর্যটক এর একটি বিশেষ জানতে চাওয়া হল মহেরা জমিদার বাড়ি প্রবেশ টিকিট মূল্য, নিচে আমরা তাদের বুঝার সুবিধার্থে মহেরা জমিদার বাড়ি প্রবেশ মূল্য টেবিল আকারে তুলে ধরেছি।
বয়স/বিষয় | টিকিট মূল্য |
০-৫ বছর | ফ্রী |
৫ – যেকোন বয়স | ১০০ টাকা |
সুটিং,পিকনিক,ফ্যামিলি ট্যুর | শর্তসাপেক্ষে মূল্য নির্ধারণ করা হয় |
দেখে নিন: নীলক্ষেত বই মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ কবে
মহেরা জমিদার বাড়ি নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১.মহেড়া জমিদার বাড়ি সাপ্তাহিক বন্ধ কবে থাকে?
উত্তরঃ- প্রতিদিনই প্রায় খোলা থাকে।
২.মহেড়া জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ- টাঙ্গাইল শহরে অবস্থিত।
৩.মহেরা জমিদার বাড়ির জমিদারের নাম কি?
উত্তরঃ-মহেরা জমিদার বাড়ির জমিদারের নাম কালীচরণ সাহা।
৪.জমিদারি প্রথা কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তরঃ-১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনের মাধ্যমে জমিদারি প্রথা চালু করেন। এটি সর্বপ্রথম বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা এবং বারাণসী প্রদেশে চালু হয়েছিল।
শেষ কথা
আমরা জানি মহেরা জমিদার বাড়ি ইতিহাস , ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, সংস্কৃতি এবং মনোরম পরিবেশের জন্য দর্শনার্থীদের কাছে একটি জনপ্রিয় আকর্ষণ। তাই mohera jomidar bari off day সহ অন্য সব তথ্য তুলে ধরছি।
আশা করি মহেরা জমিদার বাড়ি সাপ্তাহিক বন্ধ সহ যাবতীয় তথ্য আপনি বুঝতে পেরেছেন।
আমাদের সবোর্চ্চ প্রচেষ্টা ছিল সঠিক তথ্য সঠিক ভাবে আপনাদের কাছে পৌছে দেওয়া।এরপরও যদি mohera jomidar bari tangail নিয়ে আপনাদের আরও কিছু জানার থাকে আমাদেরকে নিচে কমেন্টস বক্স এর মাধ্যেমে জানাতে পারেন।
আমরা সাধ্যমতো সঠিক তথ্য জানানোর চেস্টা করব। ধন্যবাদ মহেরা জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ নিয়ে আর্টিকেল টি পড়ার জন্য।
আরও জানুনঃ
- ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল সাপ্তাহিক বন্ধ কবে?
- চকবাজার পাইকারি মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধের দিন
- সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর সাপ্তাহিক বন্ধ
- বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক গাজীপুর সাপ্তাহিক বন্ধ
- ড্রিম হলিডে পার্ক সাপ্তাহিক বন্ধের দিন
- ঢাকা মেট্রোরেল সাপ্তাহিক বন্ধ কবে।
- যমুনা ফিউচার পার্ক বন্ধের দিন
- পাসপোর্ট অফিস সাপ্তাহিক বন্ধ
- রমনা পার্ক বন্ধের দিন
- মোতালেব প্লাজা সাপ্তাহিক বন্ধ
আমি শারমিন আক্তার, লিখা লিখির মাধ্যমে মানুষ কে সঠিক তথ্য দেওয়া আমার এক ধরনের শখ বলতে পারেন, তাই আমি নিয়মিত ব্লগ আর্টিকেল শেয়ার করতে পছন্দ করি। আশা করি আমার শেয়ার করা আর্টিকেল আপনাদের কাজে আসবে, এটাই আমার স্বার্থকতা। সবাই কে ধন্যবাদ।