মূলধন বাজার কাকে বলে | বৈশিষ্ট্য সমূহ। উপকারিতা | অপকারিতা

আধুনিক অর্থনীতিতে মূলধন বাজার অনেক ভূমিকা পালন করে। এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকার সহ যেকোন ব্যক্তিকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থ সংগ্রহের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। মূলধন বাজার ছাড়া অর্থনীতি এগিয়ে যেতে পারে না।

কারণ এটি বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য অর্থ বা পুঁজি সরবরাহ করে। তাই আজকের পোস্টে আমরা মূলধন বাজার কাকে বলে?

মূলধন বাজার বলতে কি বোঝায়? মূলধন বাজারের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। অতএব দেরী না করে চলুন আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করি।

মূলধন বাজার কাকে বলে?

মূলধন বাজার হল এমন কিছু বাজারের সমষ্টি যেখানে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদের জন্য অর্থ ধার দেওয়া ও নেওয়া এবং বিনিয়োগ করা যায়। বর্তমানে মূলধন বাজার অনেক জমে উঠেছে। কারণ প্রতিনিয়ত নতুন কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠান তৈরী হচ্ছে যারা মূলধন বাজারের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা নেয় অথবা বিনিয়োগ করে।

What is Capital Market?

মুলধন বাজারের বৈশিষ্ট্য সমূহ

মূলধন বাজারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

  • মূলধন বাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী অর্থ কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রদান করে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ব্যবসা বাড়াতে বা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে অথবা দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পরিশোধ করতে মূলধন বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।
  • মূলধন বাজার বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার, বন্ড, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ডেরিভেটিভ ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করে তাদের অর্থ বৃদ্ধি করতে পারে।
  • মূলধন বাজারে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি থাকে। যেমন শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে, বন্ডের মূল্য হ্রাস পেতে পারে এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মূল্যও কমতে পারে। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আগে ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।
  • মূলধন বাজারে বেশিরভাগ অর্থ সংগ্রহ এবং প্রদান তুলনামূলক সহজ। যার অর্থ হলো বিনিয়োগকারীরা সহজেই তাদের বিনিয়োগ ক্রয় বিক্রয় করতে পারে।
  • মূলধন বাজারে অন্যান্য বাজার ব্যবস্থার মত কোন কিছুর দাম চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। যখন চাহিদা বেশি থাকে তখন তার দাম বেড়ে যায় এবং যখন সরবরাহ বেশি থাকে তখন দাম কমে যায়।
  • মূলধন বাজার সরকার ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাজারে সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মকানুন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে। এছাড়া প্রয়োজনে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে।
  • মূলধন বাজার অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিভিন্ন নবীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

বিভিন্ন ধরনের মূলধন বাজার

মূলধন বাজার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। নিচু বহুল পরিচিত কিছু বাজার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১. স্টক এক্সচেঞ্জ

স্টক এক্সচেঞ্জ হলো এমন একটি বাজার যেখানে কোম্পানি তাদের শেয়ার বা স্টক বিক্রি করে দীর্ঘমেয়াদী অর্থ সংগ্রহ করে। বিনিয়োগকারীরা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার ক্রয় করে কোম্পানির মালিকানার অংশীদার হয়ে ওঠে এবং কোম্পানির লাভের অংশ পায়।

বাংলাদেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ যেখানে গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ইত্যাদি এর মতো কোম্পানি শেয়ার লেনদেন হয়।

২. বন্ড বাজার

বন্ড বাজার হলো এমন একটি বাজার যেখানে সরকার বা প্রতিষ্ঠান ঋণ সংগ্রহের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণপত্র বা বন্ড বিক্রি করে। বিনিয়োগকারীরা বন্ড ক্রয় করে ঋণদাতা হয়ে ওঠে এবং নির্দিষ্ট সময়ের পরে সুদের সাথে মূল টাকা ফেরত পায়। বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র রিন দেওয়া ব্যাংক এর আওতায় পড়ে

৩. বীমা

বীমা হলো ঝুঁকি হ্রাসের একটি উপায় যেখানে বীমা গ্রহীতা একটি নির্দিষ্ট অর্থ বীমা দাতার কাছে সেট করে রাখে। বীমা কোম্পানি কোন ঝুঁকি ঘটলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। যেমন আপনি যদি সাস্থ্য বীমা নেন তাহলে আপনার কোন ধরনের অসুখ হলে বীমা কোম্পানি থেকে অর্থ সহায়তা পাবেন।

৪. ক্রেডিট বাজার

ক্রেডিট বাজার হলো এমন একটি বাজার যেখানে একজন ব্যক্তি বলে  প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদী ঋণ ব ক্রেডিট পেতে পারে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত ঋণদাতারা ক্রেডিট বাজারে ঋণদাতা হিসেবে কাজ করে।

৫. ডেরিভেটিভ বাজার

ডেরিভেটিভ বাজার হলো এমন একটি বাজার যেখানে আর্থিক চুক্তি যা ডেরিভেটিভ নামে পরিচিত তা ক্রয় বিক্রয় করা হয়। সাধারণত ডেরিভেটিভগুলো অন্যতম আর্থিক সম্পদের যেমন শেয়ার, বন্ড, মুদ্রা ইত্যাদির মূল্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

বিনিয়োগকারীরা ডেরিভেটিভ ব্যবহার করে ঝুঁকি কম করতে পারে। আবার বাজারে দৃড় অবস্থান নিতে পারে এবং অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ তৈরী করতে পারে।

মূলধন বাজারের উপকারিতা

মূলধন বাজারের ফলে কি ধরনের উপকারিতা হয় তা নিচে দেওয়া হলো:

  • মূলধন বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি আপনার অতিরিক্ত অর্থকে কাজে লাগিয়ে আপনার সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারেন। শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড ইত্যাদিতে ইনভেস্ট করে আপনি মুনাফা ও লভ্যাংশ অর্জন করতে পারবেন।
  • মূলধন বাজার থেকে নিয়মিত লভ্যাংশ ও মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে আপনি অতিরিক্ত আয়ের উৎস তৈরি করতে পারেন।
  • মূলধন বাজার দেশের আর্থিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি করে।
  • মূলধন বাজার নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তারা তাদের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন মূলধন বাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারে।
  • মূলধন বাজার দেশের অর্থনীতিতে দ্রুত ও সহজে মূলধন গঠনে সহায়তা করে। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি বিক্রি করে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন সংগ্রহ করতে পারে।
  • মূলধন বাজার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আপনার অর্থনৈতিক জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আপনাকে আরও সচেতনভাবে আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

মূলধন বাজারের অপকারিতা

মূলধন বাজারের কিছু উপকারিতাও আছে। নিচে সেগুলো দেওয়া হলো:

  • মূলধন বাজার প্রায়শই অস্থির থাকে যার ফলে দাম দ্রুত ও অপ্রত্যাশিতভাবে ওঠানামা করতে পারে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বিশেষ করে যারা অল্পমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য বাজারে প্রবেশ করে।
  • বড় বিনিয়োগকারীদের প্রায়শই ছোট বিনিয়োগকারীদের তুলনায় বাজার সম্পর্কে বেশি তথ্য থাকে। এর ফলে ছোট বিনিয়োগকারীরা অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারে।
  • ব্রোকারেজ ফি, ডিপজিটরি ফি এবং অন্যান্য লেনদেনের খরচ বিনিয়োগকারীদের মুনাফা কমিয়ে দিতে পারে।
  • মূলধন বাজার নিয়ন্ত্রণকারী নিয়মকানুন জটিল হতে পারে যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বোঝা ও মেনে চলা কঠিন হয়।
  • মূলধন বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। শেয়ারের দাম দ্রুত ওঠানামা করতে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের একটি অংশ বা সমস্ত অংশ হারাতে পারে।

আমাদের শেষ কথা

আশাকরি মূলধন বাজার সম্পর্কে আপনি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে মূলধন বাজার নিয়ে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

আরও জানুনঃ

Leave a Comment